কুরআন পাঠ আন্দোলন

সংগঠন পরিচিতি

কুরআন পাঠ আন্দোলনএকটি অরাজনৈতিক ও শিক্ষামূলক সামাজিক সংগঠন। এর লক্ষ্যউদ্দেশ্য সীমিত ও সুনির্দিষ্ট মাতৃভাষায় কুরআনের অনুবাদ পাঠ উদ্বুদ্ধকরণ ও বিস্তৃতকরণ, কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ এবং কুরআনের অনিন্দ্য সুন্দর দর্শনের উপর দাঁড়িয়ে সমাজে সর্বজনীন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করা।

বাংলাদেশের সর্বত্র প্রায় সমজাতীয় কাজ আমরা প্রায় দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে কুরআন একাডেমি ফাউন্ডেশন (কাফ)” বা তারও পূর্বে কুরআন স্টাডি ফোরাম (কিউএসএফ)” ইত্যাদি নামে আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে চালিয়ে আসছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় মানবসমাজের সর্বস্তরে মাতৃভাষায় কুরআন চর্চাকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করার মানসে কুরআন পাঠ আন্দোলনএকটি সাংগঠনিক রূপ লাভ করেছে

ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব নিবেদিতপ্রাণ কুরআনপ্রিয় ভাইবোনগণ দীর্ঘদিন থেকে কুরআন সাধনা করে একটি আলোকিত জীবন গঠনের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন, সেই যাবতীয় ইতিবাচক কাজের ধারাকে আমরা একটি যৌথ সমৃদ্ধ এবং উন্নততর অভিযাত্রায় রূপ দিতে চাচ্ছি, যাতে করে দেশ ও জাতি আমাদের এই সমন্বিত কুরআনী কাজ দ্বারা উপকৃত হতে পারে।

আমরা এতদ্বারা পারস্পরিক পরামর্শ এবং অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে মহিমান্বিত কুরআনের বিশুদ্ধ পাঠচর্চাকে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় অংশগ্রহনের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই। কুরআনপাঠ পরবর্তী তার আলো ও চেতনাকে ধারণ করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মহল, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত কুরআনের বার্তাকে পৌঁছে দিতে এবং সমাজে বসবাসরত সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিসম্প্রীতি ও সৌহার্দের মেলবন্ধন তৈরিতে আমাদের এই সংগঠন কাজ করে যেতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বেই কুরআন বুঝে পাঠ করা বা কুরআন পাঠ করে উপলব্ধি করা এবং এর মাধ্যমে নিজের জীবনে কুরআনের আদেশনিষেধ, উপদেশ ইত্যাদির প্রতিফলন ঘটানো এবং সেই সাথে কুরআনের শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে এই প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করছি। এইসব প্রক্রিয়াকে একটি সম্মিলিত ও সমন্বিত প্ল্যাটফর্মের অধীনে এনে কুরআন পাঠের এই চলমান ধারাকে এটি সুসংগঠিত আন্দোলনে রূপ দেয়ার মহতী লক্ষ্য নিয়ে কুরআন পাঠ আন্দোলনএর সূচনা।

আন্দোলন বা মুভমেন্ট (Movement) এর অর্থ একটি পরিবর্তনের সূচনা। আমরা কুরআন পাঠের জগতে এই ধারাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এবং এর মাধ্যমে মাতৃভাষায় কুরআন পাঠ সম্পর্কে মানুষের মনোজগতেও যে ধারণা আছে তার পরিবর্তনের সূচনা করতে চাই। এভাবে কুরআনের শিক্ষাকে সমাজে ঐক্যবদ্ধভাবে ছড়িয়ে দিতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।

কুরআন পুরো মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে কথা বলে এবং ধর্মমত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করে না; বরঞ্চ বলপ্রয়োগ করে কারও মতাদর্শ পরিবর্তন করানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে (no compulsion or coercion)সকল সমাজেই নানা মত, পথ ও বিশ্বাসের মানুষ থাকবে। এই দ্বিমত বা ভিন্নমত সম্বলিত সমাজের সবাইকে নিয়ে নৈরাজ্যফাসাদ না করে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপরে কুরআন সর্বাবস্থায় জোরালো তাকিদ দেয়। কুরআন সর্বাবস্থায় সকলের বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল হতে শেখায়। কুরআন এতটাই গুরুভার বাণী সম্বলিত (কওলান সাকিলা) একটি মহাগ্রন্থ, যা সকল শ্রেণিপেশা, বিশ্বাসমতাদর্শের মানুষকে অতি সহজেই একত্রিত, সংযুক্ত (connect) করতে পারে। কুরআনের শাশ্বত বার্তাগুলো সমাজে বিভক্তি ও বিভাজনের বিপরীতে একতা ও সৌহার্দ শিক্ষা দেয়। কুরআন সমাজে ধর্মের অনুশীলনের যে দর্শন উপস্থাপন করে, তার মূল কথা হলো, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সবার মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং যার যার দায় শুধু তার নিজের উপরই বর্তায়নীতি অবলম্বনে ধর্মের বাণী শুধুমাত্র যুক্তিসঙ্গতভাবে তুলে ধরা এবং যেকোনো ধরনের বাড়াবাড়ি পরিহার করা।

অথচ দীর্ঘদিন ধরে আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করে আসছি যে, ধর্মের ময়দানে ওয়াজনসিহতের নামে যা কিছু হচ্ছে তার সিংহভাগ কুরআনের নিখাদ নির্বিবাদি শিক্ষা সম্প্রসারণের পরিবর্তে ধর্মান্ধতা, কূপমন্ডুকতা এবং উগ্রতাহিংস্রতার ব্যাপক চাষাবাদ করছে এবং ক্রমবর্ধমান হারে তার প্রচারপ্রসার করে যাচ্ছে। এর মোকাবেলায় কুরআনের নিখাদ সত্যের পাঠ, বিস্তৃতি ও জনপ্রিয়করণের মাধ্যমেই সমাজে স্থিতি, সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বৃদ্ধি পাবে ও ত্বরান্বিত হওয়া সম্ভবতাই আমরা শান্তিশৃঙ্খলাউন্নয়ন সংরক্ষণে কুরআনের সর্বজনীন নির্বিবাদী শিক্ষাকে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সর্বজনীন কুরআন পাঠের আয়োজন করে থাকি। আমরা আশা করি, এ উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় সমাজ থেকে জঙ্গীবাদী তৎপরতা, ধর্মের নামে উগ্রতাহিংস্রতা, বিদ্বেষ ও সংঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস পেয়ে সমাজে শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধি অর্জিত হবে। একই উদ্দেশ্যে আমরা সরকারের বহু নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে জনস্বার্থে কুরআনী দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের চিন্তাধারণা বিনিময় করে থাকি।

সাংগঠনিক কাজের সুবিধার্থে আমরা একটি কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটি গঠন করেছি এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে আহবায়ক কমিটির সাথে সমন্বয় সাধন করে কাজের সুবিধার্থে স্থানীয়ভাবে সমন্বয়ক কমিটি গঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। এই আহবায়ক কমিটি কোন স্থায়ী নির্বাচন নয়; আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে বহু গুণগত কাজের মধ্য দিয়ে একটি অধিকতর যোগ্য নেতৃত্ব এবং কুরআন পাঠ আন্দোলনএর জন্য একটি স্থায়ী কমিটি গঠিত হবে, ইনশাআল্লাহআর সেই সাথে পর্যায়ক্রমে জেলাউপজেলায় সমন্বয়ক কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হবে।

Inauguration of Quran Path Andolan

৩১ আগস্ট ২০২৫, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগররুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘কুরআন পাঠ আন্দোলন’ নামক সামাজিক সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে।